নিজেস্ব প্রতিবেদকঃ রাজধানীসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় মাস্ক ও স্যানিটাইজার নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের অরাজকতা চলছেই। দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এই দুই পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। মাস্ক ও স্যানিটাইজারের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু করেছে। রাজধানীতে সরেজমিনে গিয়ে এবং দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদের ভিত্তিতে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীর বেশির ভাগ ওষুধের দোকানে মাস্ক ও স্যানিটাইজার সংকট। হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পর এই দুই পণ্য বেশি দামে বিক্রি করা শুরু করেছেন দোকানিরা। ওষুধের দোকান ও বড় মুদির দোকানে ‘মাস্ক নেই’ সংক্রান্ত লেখা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে ওষুধের দোকানে মাস্ক না পেয়ে ফুটপাতে ভিড় জমিয়েছে নগরবাসী। কর্তৃপক্ষকে ফাঁকি দিয়ে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বেশি দামে বিক্রির ধান্ধায় ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পণ্য দুটি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এদিকে মাস্ক ও স্যানিটাইজারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানা করেছেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাবর রোড এলাকায় র্যাব ও ঔষধ প্রশাসনের যৌথ অভিযানে ফেস-মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার মজুদ করা, সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকা এবং আনরেজিষ্টার্ড ওষুধ রাখার দায়ে ১১টি ওষুধের ফার্মেসিকে মোট ১২,০০,০০০/-(বার লক্ষ) টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত। একই দিনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের যৌথ অভিযানে রাজধানীর বিএমএ ভবন এবং আজিমপুরে ভ্রাম্যমান আদালাত পরিচালনা করে। এই সময় উচ্চ মূল্যে ফেস-মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রয় ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের গায়ের মূল্য মুছে ফেলা ও অন-অনুমোদিত ওষুধ রাখার দায়ে আহম্মদ ড্রাগ এজেন্সি, মা মেডিসিন ও হেলথ এইড ফার্মেসিকে ৬০,০০০/-(ষাট হাজার) টাকা জরিমানা করা হয়। উক্ত অভিযানে ডিএমপি এর ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল-মামুন এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন ও নাহিদ আল-আলম অংশগ্রহণ করেন। তাছাড়া
মহাখালী, গুলশান ও বনানী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন ওষুধ দোকানিকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন উত্তর সিটির নির্বাহী হাকিম রোসলিনা পারভীন। এ ছাড়া মাস্ক ও স্যানিটাইজারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চকবাজার, মিটফোর্ড, নয়াবাজার, বাবুবাজার ও নিউ মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ভ্রাম্যমাণ আদালত মোট এক হাজার দোকান পরিদর্শন করে বাড়তি দাম রাখার জন্য এক হাজার ৪৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন।
অভিযানের বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, ‘আমরা মিটফোর্ডসহ বিভিন্ন এলাকার কারখানাগুলো পরিদর্শন করেছি। তাদের পণ্যের অর্ডারের কাগজপত্র দেখেছি। সেখানে দেখা গেছে অধিকাংশ জায়গায়ই সরবরাহ কম।’ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমানের উদ্যোগে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে বলে জানা গেছে।
এদিকে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি সংস্থার অভিযানের পরও পাঁচ টাকার সার্জিক্যাল মাস্ক ৫০ টাকায় এবং একটু ভালো মানের মাস্ক ১৮০ টাকায় বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজধানীর বাইরেও বেশি দামে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমানের উদ্যোগে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া গত ৯ই ফেব্রুয়ারী নারায়ণগঞ্জ শহরে কালিবাজার এলাকায় নুরুল মেডিকেল কর্ণারে ১০ টাকার মাস্ক ৫০ টাকায় বিক্রয় করার দায়ে বিক্রেতা বিশ্বজিত (২০) কে ১মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয় ভ্রাম্যমান আদালত। অপরদিকে সরকারী ঔষধ, ফিজিশিয়ান স্যাম্পল সংরক্ষণ করার অপরাধে হক ফার্মেসিকে ৫০০০/-(পাঁচ হাজার), নুরুল মেডিকেল কর্ণারকে ৩০,০০০(ত্রিশ হাজার), রাজু মেডিসিন কর্ণারকে ২০,০০০(বিশ হাজার), ইউনিক ফার্মাকে ৫,০০০(পাঁচ হাজার), মাসুম ফার্মেসিকে ৫,০০০(পাঁচ হাজার) এবং তাকিন সার্জিক্যালকে ৫,০০০(পাঁচ হাজার) টাকা জরিমানা করা হয়। উক্ত অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মেহেদী হাসান ফারুক, আব্দুল মতিন, নাসরিন আক্তার এবং ঔষধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন অংশগ্রহণ করেন। এদিকে ঔষধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন এর উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের শরিফ ফার্মাসিউটিক্যালস লি. ও সারকা ল্যাবরেটরিজ লি. এর কারখানায় ভারত হতে আমদানিকৃত রেনিটিডিনের কাঁচামালে এনডিএমএ শনাক্ত হওয়ায় অব্যবহৃত ৬৫০.৭৫ কেজি কাঁচামাল ধ্বংশ করা হয়। এবং ১০ই ফেব্রুয়ারী ঔষধ প্রশাসন চট্টগ্রামের উদ্দ্যোগে বন্দর, ইপিজেড, ডাবল মরিং ও হালি শহর থানা এলাকার ঔষধ ব্যবসায়ীদের সাথে করোনা ভাইরাজ সংক্রামন প্রতিরোধ এবং নকল-ভেজাল ঔষধ বিক্রয় বন্ধ সহ ফেস-মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সহজলভ্য করার বিষয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। উক্ত আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আকিব হোসেন।
একই দিন সন্ধ্যায় উপ-পরিচালক ড. আকিব হোসেন এর নেতৃত্বে ফেস-মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রয় হচ্ছে কি না তার তদারকির জন্য ২০টি দোকান পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শন কালে তিনি দেখতে পান ঔষধের ফার্মেসিতে ফেস-মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সরবারহ কম। ফেস-মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার নির্ধারিত মূল্যের থেকে বেশি দামে বিক্রয় করা হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ঔষধ ব্যবসায়ীদের তিনি বিশেষ ভাবে সতর্ক করেন। এ সময় ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক মো. কামরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। এর পূর্বে ৯ই ফেব্রুয়ারী ঔষধ প্রশাসন চট্টগ্রাম ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্দ্যোগে গোমদন্ডি সদর বোয়াল খালিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়।এই সময় ফিজিশিয়ান স্যাম্পল বিক্রি, আন-রেজিষ্টার্ড ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রি, প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ বিক্রি, তাপ সংবেদনশীল ঔষধ যথাযথ সংরক্ষন না করা এবং ফার্মাসিষ্ট না থাকায় ৮টি ফার্মেসিকে মোট ১,৪৫,০০০/- (এক লক্ষ পয়তাল্লিশ হাজার) টাকা জরিমানা করা হয়। ১১ ফেব্রুয়ারী গাইবান্ধার ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক করোনা ভাইরাস সংক্রামন প্রতিরোধে ব্যাবহৃত ফেস-মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর মূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধে গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন ঔষধের ফার্মেসি পরিদর্শন পূর্বক ঔষধ ব্যবসায়ীদের সরকার নির্ধারিত মূল্যে ফেস-মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি না করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিশেষ ভাবে সতর্ক করেন। এর পূর্বে গাইবান্ধার ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক এবং সদুল্যাপুর উপজেলা প্রশাসন এর যৌথ উদ্দ্যোগে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এই সময় ফিজিশিয়ান স্যাম্পল, আন-রেজিষ্টার্ড ঔষধ এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ সংরক্ষন এর অপরাধে ঔষধ আইন ১৯৪০ এর বিভিন্ন ধারায় ৪টি ঔষধের ফার্মেসিকে ১৮,০০০/-(আঠারো হাজার) টাকা জরিমানা করে ভ্রম্মমান আদালত। গত ১ ফেব্রুয়ারী কুষ্টিয়ার ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক শহরের বিভিন্ন সার্জিক্যাল ও ঔষধের দোকানে ফেস-মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার উচ্চ মূল্যে বিক্রয় হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখেন এবং যদি কোন ফার্মেসিতে উচ্চ মূল্যে ফেস-মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ঔষধ ব্যবসায়ীদের বিশেষ ভাবে সতর্ক করেন।
গত ৯ই ফেব্রুয়ারী মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও ঔষধ প্রশাসনের যৌথ উদ্দ্যোগে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। এই সময় বিক্রয় নিষিদ্ধ, রেজিষ্ট্রেশন বিহীন, মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ এবং ফিজিশিয়ান স্যাম্পল বিক্রির জন্য সংরক্ষন করার দায়ে ৯টি ফার্মেসিকে মোট ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা জরিমানা করা হয়। অপরদিকে গত ৯ই ফেব্রুয়ারী ঝিনাইদাহের ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক মো. নাজমুল হাসান স্থানীয় ঔষধ ব্যবসায়ীদের সাথে নকল-ভেজাল, মেয়াদ উত্তীর্ণ, অন-অনুমোদিত ঔষধ ও অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের যৌক্তিক ব্যবহার প্রসঙ্গে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেন। এছাড়া তিনি ঝিনাইদাহ শহরের বিভিন্ন ফার্মেসিতে ফেস-মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরকার নির্ধারত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে কি না সেই বিষয়ে তদারকি করেন। এছাড়া গত ১০ ফেব্রুয়ারী ফেনীর ঔষধ তত্বাবধায়ক ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার ঔষধ ব্যবসায়ীদের সাথে নকল-ভেজাল ঔষধ এবং করোনা ভাইরাস সংক্রামন প্রতিরোধে ফেস-মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সহজলভ্য করার বিষয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেন। এবং পর দিন ১১ ফেব্রুয়ারী ফেনী জেলার পশুরাম উপজেলা বাজারে এসিল্যান্ড পশুরাম এবং ঔষধ প্রশাসনের যৌথ উদ্দ্যোগে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হয়। এই সময়ে সঠিক তাপমাত্রায় ঔষধ সংরক্ষন না করা এবং আন-রেজিষ্টার্ড ঔষধ রাখার দায়ে ২টি ফার্মেসিকে জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত ।